Wednesday, November 19, 2025
spot_img
হোমআজকের পত্রিকাসংযমের রাজনীতি: সালাহউদ্দিন আহমেদের শান্ত উত্থান

সংযমের রাজনীতি: সালাহউদ্দিন আহমেদের শান্ত উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের রাজনীতি বরাবরই দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো উত্তেজনা, স্লোগান ও কটূক্তির রাজনীতি হিসেবে পরিচিত। এখানে আবেগ প্রাধান্য পায়, যুক্তি ও সংযমের কণ্ঠস্বর প্রায়ই হারিয়ে যায় রাজনৈতিক কোলাহলে।

তবে সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের আবির্ভাব এক ব্যতিক্রম। তার শান্ত, যুক্তিনির্ভর ও সংযত বক্তৃতার ধরন রাজনীতিতে এনে দিয়েছে এক নতুন সুর—যা বিরল হলেও দ্রুতই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।


হাসিনা পতনের পর নতুন বাস্তবতা

২০২৪ সালের জুলাইয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ঘটে এক ভূমিকম্পতুল্য রাজনৈতিক পরিবর্তন। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যুগ।
সেই প্রেক্ষাপটেই শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে আত্মপ্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ—যিনি নিপীড়নের অন্ধকার পেরিয়ে উঠে এসেছেন নতুন আলোর প্রতীকে।


নিপীড়ন থেকে পুনরুত্থান

২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ভারতের শিলং শহরে তাকে আটক অবস্থায় পাওয়া যায়।
এক সময় এই ঘটনা তার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ডেকে আনবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু আজ সেই নিখোঁজ হওয়াই যেন তার নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত গুম কমিশন পরে নিশ্চিত করে, সালাহউদ্দিন ছিলেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এক স্পষ্ট উদাহরণ। ২০২৫ সালের ৩ জুন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।


সন্দেহ ও পুনর্বাসনের গল্প

ভারতে প্রায় নয় বছর কাটানোর কারণে তার বিরুদ্ধে নানা জল্পনা ও গুজব ছড়ায়। কেউ কেউ তাকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সালাহউদ্দিন যুক্তি ও বাস্তবতার মাধ্যমে প্রমাণ করেন—তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একজন সৎ ও নীতিনিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সংবেদনশীল প্রেক্ষাপটে তার অবস্থানকে অনেকেই দেখছেন পরিমিত কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হিসেবে।


সংযমের রাজনীতি

২০২৪ সালের আগস্টে দেশে ফিরে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠেন সালাহউদ্দিন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যুক্ত হন।
তার বক্তব্যে নেই আক্রমণাত্মক স্লোগান, নেই আবেগের বিস্ফোরণ—বরং আছে গঠনমূলক বিশ্লেষণ ও যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি।

রাজনীতিতে এমন সংযমী ও বাস্তববাদী নেতৃত্বকে অনেকে বলছেন “নতুন ধরনের রাজনীতির সূচনা”।


নতুন নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের উত্থান শুধু একজন নেতার পুনরুত্থান নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। দীর্ঘদিনের সংঘাতমুখী রাজনীতির বাইরে তিনি তৈরি করছেন এক নতুন রাজনৈতিক ভাষা—যেখানে যুক্তি, সংযম ও শালীনতাই প্রধান অস্ত্র।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এখন নিজেকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে। আর সেই পুনর্গঠনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।

টাঙ্গাইল উত্তর সর্বশেষ

জনপ্রিয়