খাদেমুল ইসলাম মামুন, ঘাটাইলডটকমঃ ইতিহাস থেকে জানা যায়, এলাকাটির পূর্ব নাম ছিল লোহানী। পাল বংশের কীর্তিমান পুরুষ সাগর রাজা দিঘিটি খনন করার পর তার নামের সাথে মিল রেখে দিঘিটির নামকরণ করা হয় সাগরদিঘী। সেই থেকে পাহাড়ী এই জনপদটি সাগরদিঘী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। দিঘির পাড়সহ মোট আয়তন ৩৬ একর।
কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় দিঘির পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু স্থাপনা। উত্তর পাড়ে রয়েছে সাগরদিঘী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মন্দির। দক্ষিণ পাড়ে সাগরদিঘী দাখিল মাদ্রাসা। পশ্চিম পাড়ে রয়েছে অস্থায়ী এলজিইডির বাংলো এবং পূর্বপাড়ে সাগরদিঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। এক সময় দিঘির যৌবনের আলোক ছটায় মুগ্ধ হতো শত শত প্রকৃতি প্রেমী দর্শনার্থী। সবুজের সমারোহে ভরপুর ছিল দিঘির পাড়।
আর সবুজ পত্রপল্লবের নান্দনিক পরিবেশ বিষন্ন মনেও দোলা দিয়ে যেতো। স্বচ্ছ পানির ঢেউ আছড়ে পড়তো দিঘির পাড়ে। গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে অচেনা পথিকের গোসল ও পিপাসা দুই-ই মেটাতো এর পানি।
দিঘিটি এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বিদের কাছে তীর্থস্থান হিসাবেও বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর বারুণী স্নানোৎসবে হাজারও ভক্তের আগমন ঘটে এই দিঘিকে ঘিরে।
দিঘির পারে অবস্থিত কালী মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী রঞ্জিত চন্দ্র বলেন, এই দিঘি আমাদের কাছে পবিত্র তীর্থ স্থান। পানি নষ্ট থাকায় বারুণী স্নানোৎসবে অনেক সমস্যা হয়। দিঘিটি ইজারা না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলোর মধ্যে সাগরদিঘি অন্যতম। তবে স্মৃতিবিজরীত এই দিঘিটি কালের গর্ভে অনেকটাই মলিন হতে চলেছে।
ঐতিহ্যের কথা না ভেবে স্বার্থান্বেষী একটি মহল দিঘি ইজারা এনে মাছ চাষ করছে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে দিঘির প্রকৃত জৌলুশ। দূষিত হচ্ছে পানি। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
এতে সাধারণ মানুষসহ দুই পাড়ের দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রশান্তির নিঃশ্বাস আর বিশুদ্ধ বাতাস থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী দিঘি এবং এলজিইডি অফিসটি সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী।