- _
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সালমান শাহ এক অবিনশ্বর নাম। মাত্র চার বছরের অভিনয় জীবনে ২৭টি ছবিতে কাজ করে তিনি দর্শকের মনে গেঁথে গেছেন চিরকালীন নায়ক হিসেবে। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় তাঁর আগমন ঘটে সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে। ১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়েই শুরু হয় এক নক্ষত্রের যাত্রা—যিনি পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই সিনেমার এক অনন্য কিংবদন্তি।
তবে অনেকেই জানেন না, সালমান শাহর প্রথম চলচ্চিত্রটি ছিল ভারতের সুপারহিট ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর অফিসিয়াল রিমেক। এ বিষয়টি নিয়ে জীবদ্দশায় সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে সালমান শাহ নিজেই পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন কেন তিনি এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন এবং কীভাবে নিজের অভিনয়কে আলাদা করে তুলেছিলেন।
সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সালমান শাহ বলেন,
“একটা শিল্পীর সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা উচিত। আমার প্রথম সিনেমা কপিরাইট ফিল্ম হলেও আমি সেটাকে নিজের মতো করে করেছি। আমি ভেবেছি, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর চরিত্রে আমির খান যা করেছেন, আমি তার চেয়েও ভালো কিছু করতে পারব।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি যখন চরিত্রটা হাতে নিই, তখন এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল—এই চরিত্রটা আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব। আমার নিজস্ব স্টাইলে উপস্থাপন করব। যাতে দর্শক বুঝতে পারে, আমির খান যদি কিছু করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশেও এমন শিল্পী আছেন, যিনি তাঁর সমতুল্য বা কখনো তাঁর চেয়েও ভালো কিছু করতে পারেন।”
পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে সালমান শাহর সঙ্গে অভিনয় করেন মৌসুমী, রাজীব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত, কল্পনা, অমল বোসসহ অনেকে। প্রযোজনা করে আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। ছবিটি মুক্তির পর বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সফলতা পায় এবং রাতারাতি সালমান শাহ ও মৌসুমী হয়ে ওঠেন কোটি দর্শকের প্রিয় তারকা।
রিমেক নিয়ে বিতর্কের জবাবে সালমান শাহ বলেন,
“আমি এই ছবিতে আমির খানের দেখাদেখি কিছু করার চেষ্টা করিনি। পর্দায় যা করেছি, পুরোটাই আমার নিজস্ব স্টাইল। দর্শক যদি মনে করেন, আমি ভালো করেছি, তাঁদের ভালোবাসাই আমার পুরস্কার। আর যদি মনে করেন আরও ভালো করতে পারতাম, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।”
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ শুধু সালমান শাহর ক্যারিয়ারের সূচনা নয়—এটি ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন এক ধারা ও রোমান্টিক নায়কের জন্মের ঘোষণা। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও সালমান শাহ আজও অগণিত ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে আছেন, যেন আরও বেশি আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।







