আজ বৃহস্পতিবার এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন। একই সঙ্গে মাদ্রাসার আলিম ও কারিগরির এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা ইন কর্মাস পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ করা হয়।
দেশের শিক্ষার তথ্য নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। তাদের তথ্যানুসারে, ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ শতাংশের বেশি। ২০০৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৬৪ শতাংশের ওপরে, ২০০৮ সালে প্রায় ৭৫ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে তা কমে যায় ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
এর পরবর্তী বছরগুলোয় পাসের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। শুধু তিন বছর (২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৮) ৭০ শতাংশের নিচে নেমেছিল।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরাসরি পরীক্ষা হয়নি, ফলে ‘বিশেষ প্রক্রিয়ায়’ সবাই উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২১ ও ২০২২ সালে ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পাসের হার ছিল এক বছর ৮৪ শতাংশের বেশি, আরেক বছর ৯৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু ২০২৩ সালে তা আবার ৮০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। আর এ বছর পৌঁছায় ৫৭ শতাংশে, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এবার ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে তুলনামূলক বেশি অকৃতকার্য হয়েছেন। এটা সার্বিক ফলাফলের ওপরে বড় প্রভাব ফেলেছে।
গত বছর (২০২৪ সালে) পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় তখন যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ২০২৩ সালের চেয়ে কমে যায়। ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
অন্যান্য সূচকও নিম্নমুখী
এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমে গেছে। গত বছর ১ হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে সব শিক্ষার্থী পাস করেছিলেন, এ বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩৪৫–এ।
অন্যদিকে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২, যা গত বছর ছিল মাত্র ৬৫টি।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা কাউকে কোনো ছক বেঁধে দিইনি বা নির্দিষ্ট করে দিইনি যে এইভাবে নম্বর ছাড় দেবেন অথবা ওভারমার্কিং (যা প্রাপ্য নয়, তার চেয়ে বেশি নম্বর দেওয়া) করবেন, বেশি বেশি দিয়ে পাসের হার বাড়াতে হবে, এ রকম কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি বলেন, ‘গত এসএসসি পরীক্ষার সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেওয়া হয়েছে নিয়ম মোতাবেক চলবে। বোর্ড পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের নিয়মটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সঠিক মূল্যায়নের জন্য এবার সময়ও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’
প্রায় অর্ধেক পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি, আবার গ্রাম-শহরের ফলাফলেও ব্যাপক তারতম্য দেখা যাচ্ছে। সেটা কি দেশের শিক্ষায় যে বড় কোনো গলদের কথা বলা হয়, সেটিই এই ফলাফলে…? জবাবে অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘এই যে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাস করল না, এটা তো কাঙ্ক্ষিত নয়। এই বিষয়টিতে আমরা একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, গলদ আছে, অবশ্যই গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। সেই দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, সেই দায়িত্ব বোর্ডের, সেই দায়িত্ব সবার।’







