টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আমন ধানের মাঠে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে কারেন্ট পোকার আক্রমণ। হঠাৎ করে এই পোকা ধানক্ষেতে আক্রমণ করায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেও তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা। এতে একের পর এক জমির ফসল নষ্ট হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে কৃষকদের।
বুধবার সরেজমিনে মধুপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ধানক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, একের পর এক জমির ধানগাছ গোড়া থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঠজুড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে কারেন্ট পোকার উপস্থিতি। কৃষকের সোনার ফসল চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সংগ্রামশিমুল গ্রামের কৃষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন,
“ধানগাছ শুরু থেকে বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু অন্য কাজের চাপে কয়েকদিন মাঠে যেতে পারিনি। এর মধ্যেই কারেন্ট পোকা পুরো জমি শেষ করে দিলো। দিনে দুইবার ওষুধ দিচ্ছি, তবুও কোনো কাজ হচ্ছে না। গাছ গোড়া থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন ধানের খরচই উঠবে না মনে হয়।”
ভট্টবাড়ি এলাকার কৃষক মুন্না ইসলাম বলেন,
“ধানক্ষেতে একদিকে ইঁদুরের উপদ্রব, আরেকদিকে কারেন্ট পোকার আক্রমণ—দুই দিকেই ক্ষতির মুখে পড়েছি। তাছাড়া বাজারে নকল ওষুধে ভরে গেছে। কোনটা আসল আর কোনটা নকল বুঝে উঠতে পারি না। নকল ওষুধ কিনে টাকা নষ্ট করছি, কিন্তু ফসলের কোনো সুফল পাচ্ছি না।”
কৃষকদের অভিযোগ, এবছর সারের দাম ছিল বেশি। তবুও তারা আশায় বুক বেঁধে বেশি দামে সার কিনে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু কারেন্ট পোকার আক্রমণে সব পরিশ্রম যেন বিফল হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ধানের চারা রোপণের আগেই কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। যেমন—
নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপণ, আইলের মাঝে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা, সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ, ও আগাম ও পোকা-সহনশীল জাতের চারা ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছি। কোথায় কীটনাশক কার্যকর হচ্ছে না, তা যাচাই করে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। একই সঙ্গে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন তারা অনুমোদিত কোম্পানির ওষুধই ব্যবহার করেন।”
কৃষকরা এখন সরকারের সহায়তা ও কার্যকর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে মধুপুর অঞ্চলে এ মৌসুমে আমনের ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।







