ghatail.com
ঢাকা শনিবার, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ / ১০ জুন, ২০২৩
ghatail.com
yummys

ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা, কতটা নিরাপদ আমরা?


ghatail.com
মো: তৌহীদুজ্জামান, ঘাটাইলডটকম
২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ / ৫৮৫ বার পঠিত
ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা, কতটা নিরাপদ আমরা?

একটা সময়ে ময়-মুরব্বিরা বলতো ছেলে আমার বড় হইছে…. মানুষ হইছে… এখন আধুনিক প্যারেন্টসরা বলে ছেলে আমার ডিজিটাল হইছে । কতটা ডিজিটাল হইছে সেটা নিয়ে সন্দেহের সুযোগ নাই, কেমন ডিজিটাল সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ কম কারন একটাই, ডিজিটাল হইছে আর কোন কথা আছে???

ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিবিপ্লবের যুগে আমরা যেমন অনেকটা হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেয়ার মত ভেসে চলেছি এবং তথাকথিত ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে যতটা উম্মুক্ত করে দিয়েছি তাতে সবার আগে আমাদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা জলাঞ্জলি হচ্ছে। 

সাইবার ক্রাইম আ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন ২০২২ সালে একটি সাইবার অপরাধ প্রবনতা বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় প্রায় ৮১ শতাংশ সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীর বয়স ১৮-৩০ এর মধ্যে। তারমানে এসব অপরাধীদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে যুবক যুবতীরা, যাদের মধ্যে ৫৭% নারী এবং ৪৩% পুরুষ। 

আগে অপরাধ বলতে আমরা চুরি, ছিনতাই, খুন-জখম ইত্যাদি বুঝতাম কিন্তু নতুন একটা ধারা শুরু হয়েছে যার নাম সাইবার অপরাধ এবং এর শাখা-প্রশাখা বিশালভাবেই বিস্তৃত। এর মধ্যে আছে অন্যের নামের নিজের আইডি তৈরি করা, অন্যের আইডির পাসওয়ার্ড চুরি করা, অন্যের ছবি এডিট করে অনলাইলে ছেড়ে দেয়া, সামাজিক মাধ্যমে কাউকে হেয় করা, পর্নগ্রাফি, অনলাইনে পন্যে কিনতে গিয়ে ঠকানো অনলাইনে চাকুরীর প্রলোভন, অনলাইন একাউন্টের তথ্য নিয়ে নেয়া, ইত্যাদি। মোদ্দাকথা হচ্ছে আমরা সবাই সাইবার অপরাধের স্বীকার হচ্ছি, কেউ প্রকাশ করছি আবার কেউ হয়ত চক্ষু লজ্জার ভয়ে প্রকাশ করছি না, অনেকেই হয়ত নিরুপায় হয়ে সাইবার অপরাধীর অন্যায় আবদার মেনে নিচ্ছি। 

প্রশ্ন হচ্ছে এসব কি বন্ধ করা যায় না বা আরো সহজভাবে বললে এসব থেকে বাচার উপায় কি? আমি বলবো শুধুমাত্র সচেতনতাই হতে পারে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে মোক্ষম হাতিয়ার। 

অনেক আগে এইডস এর বিজ্ঞাপনী স্লোগান ছিল " বাচতে হলে জানতে হবে", সাইবার অপরাধেও আসলে একই উপায়, বাচতে হলে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জানতে হবে। 

উপরের সাইবার অপরাধের লিষ্টগুলি পড়ে হয়ত খুব হালকা পাতলা বিষয় মনে হতে পারে কিন্তু এর প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর সেটা যারা এসবের ফাদে পড়েছেন তারা বুঝেন। কত শত মেয়েরা লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে, কত পরিবার নি:স্ব হয়েছে, কত শত প্রতিভাবান তরুণ-তরুণী হতাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছেন তার হিসাব হয়ত কোথাও নেই, কিন্তু অনুমান করতে খুব বেশী পরিশ্রম করতে হয় না।

আমরা কোথাও গেলেও আগে খুজি সেখানে ফ্রি ওয়াইফাই আছে কি না, আমার তরুন-তরুনীরা হয়ত জানেনই না, যে ওয়াইফাই তে সবাই কানেক্টেড থাকে সেখানে আপনার মোবাইল থেকে যে কোন ধরনের তথ্য চুরি করা মাত্র কয়েক মিনিটের বিষয় এবং এর জন্য হাই লেভেলের হ্যাকার হওয়া লাগে না, যে কোন বাচ্চা হ্যাকারই এটা করতে পারে। ইমেইলে আসা বিভিন্ন ধরনের চটকদার অফার সেটা চাকুরী হোক বা মডেলিং হোক, এগুলী সাথে সাথে ডিলিট করে ফেলা উচিত। সোস্যাল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অবশ্যই কারও সাথেই শেয়ার করা উচিত না।

তরুন-তরুণী ভাইবোনদের বলবো, অন্তত রাতের বেলা মোবাইলটা দুরে রাখুন। একটা মোবাইল দিনের বেলা যতটা দরকারী এবং জরুরী, রাতের বেলা সেই জরুরী মোবাইলই হয়ে উঠে ভয়ংকর দুষ্ট বানর যে শুধু নিজেই নাচে না, আপনাকেও নাচায়। 

উঠতি বয়সি বাচ্চাদের পিতামাতার দায়িত্ব অনেক বেশী। আপনাদের খুব গভীরভাবে চিন্তার সময় হয়েছে যে, কোন বয়সে এবং কতক্ষনের জন্য আপনার সন্তানকে মোবাইল দিবেন। রাতের বেলা ছেলে-মেয়ের রুম থেকে হালকা আলো আসে কি না বা লেপ-কম্বলের নিচে আপনার সন্তান মোবাইল নিয়ে কি করছে। এটা শুধুমাত্র আপনার সন্তানকে বিপদে ফেলবে তা নয় এটা মাত্রাতারিক্ত ব্যবহার আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ঝুকিপূর্ন। 


মো: তৌহীদুজ্জামান

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ

apache.root@gmail.com