ghatail.com
ঢাকা শনিবার, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ / ১০ জুন, ২০২৩
ghatail.com
yummys

'দুঃখের কথা কাহাকে বলিব, শুনাইব, জানাইব'


ghatail.com
জয়নাল আবেদীন, ঘাটাইল ডট কম
২০ আগস্ট, ২০২২ / ২৮৮ বার পঠিত
'দুঃখের কথা কাহাকে বলিব, শুনাইব, জানাইব'


ঘুম হইতে উঠিয়া দেখি বিদ্যুৎ নাই। নাস্তার টেবিলেও বিদ্যুৎ ছিলনা। লাঞ্চের সময়ও  দেখা মিলে নাই। ডিনার মোবাইলের আলোতে। রাতে মশারীর নিচে মাথা ঢুকাইয়া, সকাল সকাল ঘুমাইতে গেলাম। তালপাখা সম্বল করিয়া, মশারীর নিচে সটান শুইয়া, বাতাস করিতে করিতে ভাবিতে ছিলাম, আহা কতোই না সুখে রহিয়াছি। বেহেস্তে আছি। বিদ্যুৎ নাইতো কি হইয়াছে। বাতাস তো রহিয়াছে।

তালপাখা ঘুরাইলেই সেই মাগনা বাতাস শরীর ছুঁইয়া যায়। এইজন্য কোন বিল প্রদান করিতে হয়না। বাতাস ব্যবহারে কোন লোডশেডিং থাকেনা। রেশনিং সিস্টেম ও নাই। শুধু পাঙ্খা ঘুরাও আর ট্যাক্স ছাড়া হরদম বাতাস খাও।

কিছুক্ষণ পাঙ্খা ঘুরাইলেই বাতে আক্রান্ত হাতের ব্যাথা বাড়িয়া যায়। তাই কতোকক্ষণ পাঙ্খা ঘুরানো বন্ধ রাখিয়া, হাতটাকে আরাম দেই। তারপর গরম দূর করিবার জন্য, সেই পুরনো প্রেকটিস আরম্ভ করি। আলমিরা হইতে মোটা ফুলহাতা শার্ট বাহির করিয়া, গেঞ্জির উপরে গায়ে চড়াইয়া দেই। শার্টের নিচের অংশ, লুঙ্গির নিচে ইন করিয়া পরিয়া নেই। আর মোটা আন্ডারওয়ারে কোমর ও নিতম্ব জড়াইয়া কসাইয়া লই। 

ইহাতে দুই-চার দশ মিনিট, খুবই গরম অনুভূত হইয়া থাকে। সারা শরীর ও নিতম্ব অনবরত ঘামিতে থাকে। ঘামিতে ঘামিতে শরীর চুপসাইয়া গেঞ্জি, জামা, লুঙ্গি, আন্ডারওয়ার ভিজিয়া একাকার হইয়া যায়। তাহার পর শরীরটা আপনাআপনি ঠান্ডা হইয়া যায়।

যতোক্ষণ কাপড়ে জুবজুবে ঘাম থাকিবে, ততোক্ষণ সারা শরীর এসির মতো ঠান্ডা ঠান্ডা লাগিবে। এইটিকে আমি গরীবের এসি বলিয়া থাকি। পাঠকদের নিকট ইহার পরীক্ষা প্রার্থনীয়। 

বলা অনাবশ্যক, গরীবের এমন এসির প্রেকটিস শুরু করিয়াছিলাম ২০০৩ সাল হইতে। তখন দেশ ব্যাপি তীব্র বিদ্যুৎ সংকট ছিল। তাহার পর মাঝখানে দেশে বিদ্যুতের অবস্থা অনেকটা সহনীয় ছিল। এখন আবার বিদ্যুতে খাম্বার যুগ ফিরিয়া আসিয়াছে। এক খাম্বা বিদেশে চলিয়া গিয়াছেন। আর নতুন করিয়া শত শত খাম্বা জন্মগ্রহন করিয়াছেন।

আমাদের রাস্ট্রীয় ব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো, রাজনীতির কলাকৌশল, ভাগাভাগির অর্থনীতি, লুটেরা সংস্কৃতি নতুন নতুন খাম্বা তৈয়ারী করিতেছেন। তাই পুরনো খাম্বারা প্রস্তান করিলে, নতুন খাম্বারা হাম্বা হাম্বা করিয়া মাঠ দখল করিয়া বসেন। 

যাহাই হোক, মূল কথায় ফিরিয়া আসি। রাতে ঘুমাইবার জন্য বিছানায় গা এলাইয়া, গরম হইতে রক্ষা পাইবার জন্য, দেশি প্রযুক্তিতে শরীরে এসির পরশ লাগাইয়া, বেহেস্তের সুবাতাস আস্বাদন করিতে করিতে,  দেশের উন্নয়নের কথা ভাবিতে থাকি। 

ওই যে, এক মন্ত্রী মহাশয় বলিয়াছেন, সব সংকটের মধ্যেও আমরা বেহেস্তে রহিয়াছি; তাহার কথার মর্মাথ বুঝিতে ইতিহাসের পাতায় চোখ ভুলাইতে থাকি।

ইতিহাস বলে, সাড়ে সাতশ বছর আগে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইবনে বতুতা বাঙ্গালা মুলুক পরিভ্রমনের সময়, এদেশের দ্রব্যমূল্য ও সুখসমৃদ্ধি দেখিয়া যারপর নাই মুগ্ধ হইয়াছিলেন। দশ রুপিতে লুলু নামক একজন সুন্দরী বাঙ্গালী ক্রীতদাসী কিনিয়া, সেই সুন্দরী টিনএজার বালিকার সেবাযত্ন, প্রেম ভালোবাসা পাইয়া এবং সস্তায় পুষ্টিকর খাবারদাবার খাইয়া, তিনি ঘোষণা দিয়াছিলেন যে, ইয়ে বাঙ্গালকা মুলুক নেয়ামতে বেহেস্ত হ্যায়। 

কিন্তু জুন-জুলাই মাসের ভ্যাপসা গরম, বাঙ্গালদের ঝগড়াঝাটি আর অর্ধসত্য বলিবার আর্ট দেখিয়া, পরবর্তীতে বাঙ্গালা মুলুককে তিনি নেয়ামতে দোজগ বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। 

আমাদের মন্ত্রী বাহাদুর হয়তো বাঙ্গালা মুলুককে নিয়া, নেয়ামতে বেহেস্ত শব্দটাই শুধু শ্রবন করিয়াছেন। কিন্তু বাঙ্গালা মুলুকের অপর পিঠে যে নেয়ামতে দোজগ শব্দটি গাঁথিয়া রহিয়াছে, হয়তো তিনি সেটি জানিতেন না। 

যাহাই হোক, বিদ্যুত সংকট নিরসনে আমার টিনশেট ঘরে ৭০ টাকা ইউনিটে জেনারেটর সংযোগ লাগাইয়াছিলাম। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়াইবার অজুহাতে, এখন ১২০ টাকা ইউনিট করিয়াছে। বিল দিতে অপারগ হইয়া, বাজার হইতে কমদামের একটি আইপিএস  লাগাইলাম। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে সেটি কখনোই পুরা চার্জ হয়না। তাই আধাপেটা আইপিএস, একঘন্টা না যাইতেই চিচি শব্দ তুলিয়া, নিস্তেজ হইয়া যায়। 

ঘোড়ার সাথে চাবুক ফ্রি   ভাবিয়া বাজার হইতে, সৌর প্যানেল আনাইলাম।  নাতিপুতি আর গিন্নীকে প্রাইয়োরিটি দেয়ার পর রেশনিং সিষ্টেমের সৌর বিদ্যুৎ, আমার বিছানায় সহজে পৌঁছায়না। এমতাবস্থায় মোটা গেঞ্জি, মোটা জামা, মোটা আন্ডারওয়ার্ল্ড পড়িয়া ঘর্মাক্ত কলেবরে দেশি এসিতে খাবি খাইয়া প্রতি রাতে ঘুমাইতে যাই। 

কিন্তু সমস্যা হইয়াছে অন্যখানে। বয়স হওয়াতে হাটু ও গোড়ালীতে আর্থাইটিস থাকায় হাগুর জন্য হাইকমোড, আর পেচ্ছাবের জন্য হাই প্যান ইউজ করিতে হয়। বিদ্যুতের অভাবে মোবাইলে চার্জ নাথাকায় রাতের বেলা পেচ্ছাব আর হাগুতে ভ্রম হয়। অন্ধকার হাতড়াইয়া ওয়াসরুমে গিয়া, কমোড ভাবিয়া হাইপ্যান ভরিয়া হাগু দিয়া বসি। আবার মসৃন টাইলসকে প্যান ভাবিয়া, পেচ্ছাব করিয়া নিজকে খালাছ করি। 

গিন্নী কয়েক দিন ধরিয়া, এই সব কান্ড করিতে দেখিয়া, মুখ বুঝিয়া সহ্য করিয়াছে। হয়তো ভাবিয়াছেন, আমার মতিভ্রম হইয়াছে। কিন্তু প্রায়ই একই ভুল করিতে দেখিয়া, আজ সাফ জানাইয়া দিয়াছে, তোমার সহিত আর এক বিছানায় নয়।

তুমি গরম তাড়াইবার জন্য বিছানায় যেইভাবে অভিনব এসি চালু করিয়াছ, তেমনি হাগামোতার জন্য নতুন স্টাইল আবিস্কার করিও। অন্তত বাথ রুমটা সাফসুতরো থাকুক। ভাবিতেছি বিদ্যুৎ সংকটে এখন হাগামোতার স্টাইলে কি কি পরিবর্তন আনিব।

জয়নাল আবেদীন, সভাপতি, গোপালপুর প্রেস ক্লাব