অতিরিক্ত আইজিপির বাসা থেকে লাশ হয়ে ঘাটাইলে শিশু গৃহকর্মী মৌসুমি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঘাটাইল ডট কম
০২ জুন, ২০২২ / ২৮০৫ বার পঠিত
ঢাকার রমনা এলাকায় আবু হাসান মুহম্মদ তারিক নামে পুলিশের এক অতিরিক্ত আইজিপির বাসা থেকে গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই গৃহকর্মীর নাম মৌসুমী আক্তার (১৪)। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বাইচাইল গ্রামে। ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ আজহারুল ইসলাম ঘাটাইল ডট কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৌসুমির বাবার নাম মুক্তার। যিনি ১০ বছর আগে মারা গেছেন। তার মায়ের নাম ফরিদা। তার মা বাইচাইল গ্রামে একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরে কোনরকমে বসবাস করেন। ২০১৯ সাল থেকে মৌসুমি ওই বাসায় কাজ করে আসছিল। ঘটনার সময় বাসায় মৌসুমি ছাড়া আর কেউ ছিল না।
জানা যায়, গতকাল বুধবার (১ জুন) বিকেলে রমনা অফিসার্স কোয়ার্টারের বাসা থেকে দরজা ভেঙে গৃহকর্মী মৌসুমির লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার গ্রামের বাড়ি ঘাটাইলের বাইচাইল গ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে। বাড়ীতে লাশ পৌছার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যর অবতারণা হয়।
রমনা থানা পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মরদেহের গলার মাঝখানে রশি পেছানোর দাগ পাওয়া গেছে। এছাড়া মরদেহের হাত ও শরীরের দুই পাশ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। তবে দুই হাতের মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় ছিল। মরদেহে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মৌসুমি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২ জুন) মৌসুমির মরদেহের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। মৌসুমির বাড়ি থেকে তার নানী এবং বড় বোন ঢাকায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেছে বলে পরিবার সুত্রে জানা গেছে।
ঘাটাইলে সরেজমিনে মৌসুমির বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে শোকের মাতম। তার মা বারেবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সেখানে পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন।
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের এক পুলিশ সদস্য আমাদের থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। বুধবার (১ জুন) বিকেল ৫টার দিকে রমনায় অবস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক আবু হাসান মোহাম্মাদ (অতিরিক্ত আইজিপি) তারিকের বাসায় যান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য। এসময় বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় ওই পুলিশ সদস্য রমনা থানায় বিষয়টি জানান। পরে রমনা থানা পুলিশ খবর পেয়ে বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বাসার বারান্দা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মৌসুমি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে।
রমনা থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় অতিরিক্ত আইজিপির বাসায় মৌসুমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। তার স্ত্রী-সন্তানরা তখন বাসার বাইরে ছিলেন। অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মোহাম্মাদ তারিক বর্তমানে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত।
মৌসুমির মৃত্যু নিয়ে পুলিশ প্রাথমিকভাবে কী মনে করছে জানতে চাইলে ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ আজহারুল ইসলাম ঘাটাইল ডট কমকে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। তবে মরদেহের সুরতহাল আত্মহত্যার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। তবে সে যদি আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে কী কারণে করেছে আমরা তা জানার চেষ্টা করছি।
আপনার মতামত লিখুন