স্টাফ রিপোর্টার, ঘাটাইল ডট কম
১৩ মে, ২০২২ / ১৯৩ বার পঠিত
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় কয়েকটি ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় প্রায় ৪০ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের কদিম দেওহাটা, মীর দেওহাটা, দেওহাটা মল্লিকপাড়া ও সারেংবাড়ি এলাকায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকার ১০-১২টি ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ার কারণে পাশের খেতের ধানগাছের পাতা লালচে ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। ধানের ছড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশেই থাকা ঢ্যাঁড়স, ডাঁটাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবদুল হাই, উপজেলার গোড়াইল গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন, মীর দেওহাটা গ্রামের মোহাম্মদ আলী, ফজল মিয়া, মো. আমান উল্লাহ, শহিদুর রহমান ও ইউসুফ মিয়ার ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে ফসলের এমন ক্ষতি হচ্ছে। এসব ইটভাটা যে জায়গায় অবস্থিত, সেখানে কমপক্ষে ৪০ একর জমিতে ধানের আবাদ হয়।
ইটভাটাগুলো চালুর পর থেকেই জমির ফসল নষ্ট হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মীর দেওহাটা গ্রামের মো. আবু বকর। তিনি বলেন, ধোঁয়ার কারণে বোনার পর চারাগাছের পাতা বিবর্ণ হতে থাকে। এ অবস্থায় ধানের চারা বড় হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পাতার রং দেখে মনে হয় পুড়ে গেছে। ধানের ছড়া নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে।
ওই গ্রামের শাজাহান বয়াতির স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, তাঁরা ১৫০ শতক জায়গা বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেন। চার-পাঁচ বছর আগে ওই স্থানে ইটভাটা নির্মাণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ইটভাটা বাড়তে থাকে। ইটভাটা হওয়ার আগে জমি থেকে তাঁরা যথেষ্ট ধান পেতেন। কিন্তু তিন বছর ধরে জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মীর দেওহাটা গ্রামের সমেজ উদ্দিন (৮৫) বলেন, গত বছর প্রতি শতাংশ জমিতে ২০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন ইটভাটার মালিকেরা। কিন্তু ওই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে আবাদের খরচ মেটেনি। তিনি আরও বলেন, ‘কাউরে কিছুই কওয়ার নাই। ধান তো পাই না। গাছের ফল থাকে না। নারকেলগাছের নারকেল পইড়্যা যায়। অন্য গাছে যদি ফল আহে, ইট্টু অয়্যা মইর্যা যায় গা।’
মল্লিকপাড়া ও সারেংবাড়ি এলাকায় ধান চাষের জন্য চারটি সেচ প্রকল্প রয়েছে জানিয়ে স্থানীয় একটি সেচযন্ত্রের মালিক আমিনুর রহমান বলেন, ‘ইটভাটার কারণে সব প্রজেক্টের ধানেরই ক্ষতি হইছে। ভাটার ধোঁয়ায় সব পুইড়্যা গেছে। সবগুলা ভাটার ধোঁয়ার কারণে এই অবস্থা হইছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটার মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, ঈদের আগেই তাঁর ভাটার আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন। তাঁর ভাটার কারণে কোনো ধানখেত নষ্ট হয়নি।
অপেক্ষাকৃত নিচু চিমনির ধোঁয়ার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে থাকে বলে দাবি করেন আরেক ইটভাটার মালিক মো. আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, তাঁর ইটভাটার চিমনির উচ্চতা প্রায় ১৩০ ফুট, যার ধোঁয়া আকাশে মিলিয়ে যায়। ফলে তাঁর ভাটার কারণে ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি নিজেও সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত খেতগুলো পরিদর্শন করবেন।
আপনার মতামত লিখুন