টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌর এলাকার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝ মাঠ বরাবর পাকা সড়ক নিয়ে চলছে ভাঙাগড়ার খেলা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্কুলমাঠে একবার সড়ক নির্মাণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ, আরেকবার ভেঙে ফেলে প্রশাসন। গত বছর থেকে এমন আড়ি চলে আসছে প্রতিষ্ঠান দুটির। তবে এবার ঈদুল ফিতরের আগের দিন গোপনে একই জায়গায় নির্মিত হয়েছে সড়ক।
গত বছরের ১ আগষ্ট ‘স্কুলমাঠের ভেতর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণ, ৭ নভেম্বর ‘স্কুলমাঠের সেই সড়ক তবুও বহাল' ও ১৬ নভেম্বর অবশেষে ভাঙা শিরোনামে গণমাধ্যমে তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ফলে স্কুল মাঠের মাঝ বরাবর সড়ক নির্মিত হলেও পরে ভেঙ্গে ফেলে প্রশাসন। এবার ঈদুল ফিতরের আগের দিন একই স্থান দিয়ে আবারও সড়ক নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। আগেরবারও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়নি, এবারও নয়।
বিষয়টি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। অবশ্যই সড়কটি অপসারণ করা হবে।
সড়কটির নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে গত বছরের ২৯ জুলাই ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আবেদনে বলা হয়, সড়কটি নির্মাণ হলে নষ্ট হবে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য, বিঘ্ন ঘটবে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, মাঠে সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা, ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
পরে ইউএনও বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান এবং কাজ বন্ধ রাখার জন্য তৎকালীন মেয়র শহিদুজ্জামান খানকে চিঠি দেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই স্কুলের মাঝ মাঠ বরাবর সড়ক নির্মাণ করা হয়। একই বছরের ২৫ অক্টোবর মেয়রকে পাঠানো চিঠিতে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সড়কটি অপসারণের নির্দেশ দেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম। তাও অমান্য করা হয়।
পরে ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রশাসনের উদ্যোগে সড়কটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পর ছয় মাস না যেতেই ঈদের আগের দিন (২ মে) একই স্থানে আবারও সড়ক নির্মাণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, তড়িঘড়ি করে ঈদের আগের দিন ফের সড়কটির কাজ শেষ করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর ইউএনও এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও বিষয়টি জানেন।
সড়কটি ফের নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো চিঠি আছে কি?- এমন প্রশ্নের জবাবে ঘাটাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তাদের হাতে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র নেই। বিষয়টি সম্পর্কে একেবারেই কিছু জানতেন না তিনি। প্রতিবেদকের মাধ্যমেই জানতে পারলেন।
পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ মিয়ার দাবি, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর জানতে পেরেছেন তিনি।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, পৌর মেয়র, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না, তাহলে কীভাবে কাজ করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার কাজী নাসিম বলেন, পৌরসভাকে জানানো হয়েছে। আগে রাস্তাটি দেড় ফুট উঁচু করা হয়েছিল, এবার এলাকাবাসীর দাবির মুখে মাঠসমান নিচু করা হয়েছে।
(মাসুম মিয়া, ঘাটাইল ডট কম)/-
কপিরাইট © ২০১৮ - ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত |
Design & Developed by RAN SOLUTIONS
আপনার মতামত লিখুন