সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না- এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে টাঙ্গাইল বন বিভাগের সখীপুর উপজেলার চারটি রেঞ্জের আওতায় বনের ভেতর, বন ঘেঁষে ও বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশেই গড়ে উঠেছে ৪০টি অবৈধ করাতকল।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব করাতকলে রাত-দিন শাল, গজারি, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, আকাশমনিসহ বাগানের নানা প্রজাতির গাছ অবাধে চেরানো হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে বন। হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী ও পশু-পাখি। ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের হাতিয়া রেঞ্জে ১১টি, বহেড়াতৈল রেঞ্জে ১৭টি, ধলাপাড়া রেঞ্জে চারটি, বাঁশতৈল রেঞ্জের নলুয়া বিটে আটটি অবৈধ করাতকল রয়েছে। কাঠ অবাধে চেরাই করে জেলায় জেলায় পাচার করা হচ্ছে।
অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে বছরে দু-একবার অভিযান চলে। এ সময় বেশি কাঠ চেরানো কলগুলো উচ্ছেদের খবর পেয়ে যন্ত্রাংশগুলো আগেই সরিয়ে ফেলে। শুধু দুর্বল মানের কলগুলোতে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। কিছুদিন বন্ধ রাখার পর তা পুনরায় চালু হয়।
ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল কাগজে-কলমে 'সংরক্ষিত' লেখা থাকলেও অবৈধ করাতকল স্থাপন করে প্রকাশ্যে শাল, গজারিসহ বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ অবাধে চেরাই করে জেলায় জেলায় পাচার করা হচ্ছে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
এ অপকর্ম বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় দালালচক্র ও অসাধু ব্যবসায়ীরা মিলেমিশেই চালাচ্ছেন।
আরও জানা যায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিষিদ্ধ এলাকার 'ব্যবসায়িক এ উদ্যোগ' স্বাভাবিকভাবেই লাইসেন্স বা অনুমতি নেই। তাই প্রতিটি করাতকল একাধিক ব্যক্তি মিলেমিশে চালালেও মালিক খুঁজে পাওয়া যায় না। কার করাতকল, কার কাঠ, কে চেরাচ্ছে, টাকা কার পকেটে যাচ্ছে, কিছুই বোঝার উপায় নেই।
উপজেলার বাজাইল বিটের ভাতকুড়াচালা এলাকায় অবৈধ করাতকলে গিয়ে দেখা যায়, করাতকলের সামনে অসংখ্য শাল ও গজারি চেরানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাংবাদিক আসার খবর শুনে শ্রমিকরা সটকে পড়েন।
অবৈধ করাতকল মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ী চান মিয়া শাল-গজারি চেরানো ও লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকল স্থাপনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, সংশ্নিষ্টদের ম্যানেজ করেই কলগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে।
বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম খান অবৈধভাবে গড়ে ওঠা করাতকলের কথা স্বীকার করে বলেন, খুব শিগগির এগুলো উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
উপজেলা অবৈধ করাতকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, 'আমরা করাতকলগুলো স্বাভাবিক নিয়মে পরিচালনার জন্য অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে রিট করলে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে।'
বহেড়াতৈল বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, 'অবৈধ করাতকলগুলো কয়েক দফায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ করাতকল মালিকদের হাইকোর্টে মামলার কারণে উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছিল। উচ্ছেদ অভিযান প্রক্রিয়াধীন।'
উপজেলা বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও চিত্রা শিকারী বলেন, অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।
(এনামুল হক, ঘাটাইল ডট কম)/-
কপিরাইট © ২০১৮ - ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত |
Design & Developed by RAN SOLUTIONS
আপনার মতামত লিখুন