সাকিব শচিন টেন্ডুলকের চেয়ে নিশ্চয়ই বড় তারকা নয়। শচিনকে এক সময় ব্রাডমানের সঙ্গে তুলনা করা হতো। অথচ খেলোয়াড়ি জীবনে কিম্বা অবসরে যাওয়ার পর তার সম্পর্কে কোনো রটনা, কোনো কেচ্ছা কিম্বা কোনো স্ক্যান্ডাল শুনেছেন কেউ? তিনি হিন্দুস্থানের শুধু নয় ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ গুলোতে একজন লিভিংলিজেন্ড।
ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। ক্ষুধা, দারিদ্র, বন্যা, খরা মহামারি যে দেশের বিধিলিপি, সেরকম একটি দেশের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে, এখন নিজের প্রচেষ্ঠা কিম্বা গুরুদের প্রচেষ্টায় হয়ে উঠেছেন বিশ্বসেরা। ও এদেশের গর্ব। কিন্ত সেটা কি ও ধারন করতে পেরেছে না কি পারছে।
কথায় আছে বড় হলে মানুষ বিনয়ী হয়। ফলবান বৃক্ষ নুইয়ে পড়ে। কিন্ত সাকিব কেন এমন উল্টোটা হলো?
বলছিলাম শচিনের কথা। শচিনের রেকর্ড বুক কখনো সাকিব ছুঁতে পারবে কি না,সেটা ভবিষ্যতই বলবে, কিন্তু তার কাছ থেকে কি খেলোয়াড়ি আচরণ সাকিব কিছুই শিখেনি।
সাকিব হচ্ছে, একটি দুষ্টু গাভি। যে ভালো দুধ দেয়, কিন্ত, দুধ দোয়াতে গেলে গোয়ালিনিকে চাট্টি মারে, প্রতিবেশীর জমির ফসল মাড়ায়। ফলশ্রুতিতে সেই গাভিকে প্রায়শ বন্দি থাকতে হয়।
তার খেলোয়াড়ি জীবনে কতবার যে সে তার আচরন দিয়ে নিজেকে বির্তকিত করেছে তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু কেন, তার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট বার বার বিশ্বে শীরোনাম হচ্ছে। তাকে সমঝে চলতে বলার কি কেউ নেই! সত্যি বলতে কি নেই।
কারন হচ্ছে.. আমরা হচ্ছি অল্পতে তুষ্টু জাতি। সাকিব কিন্তু এমন না যে আমাদের একটি বিশ্ব শীরোপা ঘরে এনে দিয়েছে। এমনকি একটি দক্ষিন এশিয় শ্রেষ্টত্ব আমরা এখনো তার আমলে পাইনি। কিন্ত সে নিজের ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে সেরা বলে আমরা তাকে মাথায় তুলে নাচছি।
অথচ একটা জাতির অর্জন হওয়া উচিৎ হচ্ছে সেই জাতি সম্মিলিতভাবে কি এচিভ করলো.. আমরা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি সেটা ছিলো বিংশ শতাব্দির বড় অর্জন। এই শতকে আমাদের আর কোনো বড় অর্জন আমি দেখি না।
সাকিব, তামিম, মুশফিক যারা এই প্রজন্মের প্রতিভাবান ক্রিকেটার, তাদের হাত ধরে আমরা আরো একটা বৈশ্বিক সাফল্য পেতে পারতাম। কিন্ত আমরা তা অর্জনে ব্যার্থ হয়েছি,হচ্ছি।
কারন, এসব খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের পারফর্মেন্স নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে.. তখনি আমরা আমাদের সরকার তাকে নিজের সম্পত্ত্বি মনে করে লোভ দিয়ে তাদের কিনে নিচ্ছে.. যেমন উদাহরন হিসেবে সাকিবের কথাই ধরা যাক। সে ভালো পারফর্মার বলে প্রধানমন্ত্রী তাকে নিজ দলে ভিড়িয়েছেন, হরহামেশা তার খবর নিচ্ছেন, তাকে গণভবনে ডেকে নিয়ে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াচ্ছেন.. অথবা তার বাসায় রান্না করে পাঠাচ্ছেন। সেটা আবার ফলাও করে প্রচারও করছেন।
একজন প্রমিজিং পারফর্মারের মাথা নষ্ট করার জন্য এর চেয়ে আর কি লাগে! সাকিবের বয়স আর কতইবা! সে তো এই দেশের সন্তান। খেই হারাতে এটাই কি যথেষ্ঠ নয়!
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিম্বা ইন্ডিয়ার কোনো একজন খেলোয়াড়কে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কবে কতবার তার বাসভবনে ডেকে নিয়েছেন.. আছে কি কোনো নজির। হ্যা। কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের আগে অথবা সেই টুর্নামেন্ট জিতে আসার পরে সেই দেশের সরকার তাদের রিসিপশন দেয়, এটা একটা প্রথাগত বিষয়। কিন্তু ইনডিভিজুয়াল কাউকে এমনভাবে সরকার প্রধান বিশেষ খাতির যত্ন করেছেন, এটা বোধ করি বাংলাদেশেই সম্ভব।
দুই
প্রধানমন্ত্রী আমাকে পুছে, আমি কি হনুরে.. এটাই এখন সাকিবের মাথায় ঘুরছে.. না হলে সে এত এতবার খামখেয়ালিপনা করে কিভাবে। জুয়াড়ীদের সাথে সস্পর্ক রাখার কারনে এক বছরের নিষেধাজ্ঞার খড়গ মাথার ওপর থেকে উঠতে না উঠতেই তিনি জস্মদিলেন কিছু অনাকাংখিত ঘটনার জন্ম দেন। যেটা কোনোভাবেই তার জন্য দরকার ছিলোনা।
সাকিবের বউ বাচ্চা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। নিষেধাজ্ঞার বেশীরভাগ দিনগুলি সে সেখানে কাটিয়েছেন। কিন্ত এই করোনা মহামারি্র সময় তিনি দেশে ফিরলেন গভীর রাতে। পরদিন গেলেন একটি বানিজ্য বিতান উদ্বোধনে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি এখন বিশ্বের মধ্য সবচেয়ে ভয়াবহ। কিন্ত চৌদ্দদিনের কোয়ারেন্টিন তো দুরের কথা একটা দিনও থাকলেন না, একান্তে। তার দুদিন পর ঘটা করে গেলেন বাইরোডে কলকাতা পুজা উদ্ধোধন করতে।
সাকিব হচ্ছেন এ প্রজন্মের আইকন, দেশের অ্যামবেসেডর। তিনি যদি এ ধরনের আচরণ করেন, তবে তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই!
সাকিব, এখন কেবল একজন সাকিব নন, তার ভক্ত অনুসারী, অনুগামীর সংখ্যা অগুনতি। তার তো নিজ থেকেই আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু তিনি কি সেটা একবারও ভেবেছেন? না কি নিতে পারছেননা, কিম্বা ধারণ করতে পারছেননা এই ইমেজ।
তিনি কি খ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার! আমি জানিনা। তার কি কোনো পরামর্শক নেই, যারা তাকে বলে দেবে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ হবে তার জন্য.. পৃথিবীর তাবৎ সেলিব্রেটির জন্য তো এমন কিছু বাতলে দেয়ার জন্য একজন পরামর্শক থাকে!
সাকিবের নাই কেন? নাকি আছে, আমি জানিনা, থাকলে তাকে নির্ঘাৎ ছাগল বলবো!
পুজো টুজো, উদ্ধোধন নিয়ে আমার কোনো বিকার নেই। সেটা তার সস্পুর্ন নিজের ব্যাপার। কারো ব্যক্তিগত জীবনাচরন নিয়ে অামার কোনো মাথাব্যথা নেই, কখনো ছিলোনা।
কিন্তু কোনো এক ব্যক্তির ভয়ে সাকিব যখন, জড়ো সড়ো হয়ে ক্ষমা চান, তখন আমার হাসি পায়, তখন সাকিবের প্রতি করুনা হয়, এমন ঋজুহীন ব্যক্তিত্ব সে। যে নিজের কাজকে জা্ষ্টিফাই করতে দ্বিধান্বিত থাকে, তাকে অন্তত, সৎ মানুষ বলা যায়না।
সাকিব, এই কালিপুজা উদ্ধোধন নিয়ে চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছে, সে নিজমুখে বলেছে সে প্রদিপ প্রজ্জ্বলন করেছে, উদ্ধোধন করেনি, প্রদিপ প্রজ্জ্বলন মানেই তো, উদ্ধোধন, সব জায়গায় কি ফিতে কাটতে হয়! এটাকি তার চাতুরতা নয়!
সে কি ঋজু ঢঙে বলতে পারতোনা, আমি যা করেছি, সেটা ঠিক করেছি, তুমি বলার কে? সে পারেনি সেটা বলতে! কারন তার সেই সৎ সাহস নেই!
যে কিনা ভার্চুয়ালী কারো হুমকীতে নিজেকে গূলিয়ে ফেলেছে.. এই ডিজঅনেষ্ট সাকিবকে তাই, শুধুই করুনাই করা যায়, আইডল মানা যায় না! সরি সাকিব সরি!
সাকিবের প্রিয় পত্রিকা লিখেছে, বিগব্যাশ খেলা হচ্ছেনা, সাকিবের। কেন,অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের এথিকস কমিটি মনে করছে, সাকিব অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর। এরপরে আর সাকিবের গুনগান কে করবেন?
(মুজতবা খন্দকার, ঘাটাইল ডট কম)/-