যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় জো বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে গেছেন।
জো বাইডেন যদি পেনসিলভানিয়ায় তার এই অবস্থান ধরে রাখতে পারেন তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের স্বপ্ন এখানেই ধসে পড়বে বলে মনে করা হয়।
পেনসিলভানিয়ায় জয়লাভ ছাড়া কোনভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন না।পেনসিলভানিয়ার ভোট গণনার হিসেবে এই নাটকীয় পরিবর্তনের পর জো বাইডেন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে মনে করা হচ্ছে।
জো বাইডেন আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য- জর্জিয়া, অ্যারিজোনা এবং নেভাডাতেও এগিয়ে আছেন।
এবারের এই নির্বাচনী লড়াইয়ের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, পেনসিলভানিয়াতেই আসলে নির্ধারিত হবে কে হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বাসিন্দা হবেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে বিজয়ী হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে। এবারও নির্বাচনের রাতের ভোট গণনায় তিন প্রায় ৫ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।
কিন্তু ডাকযোগে আসা ভোট গণনার কাজ শুরু হওয়ার পর পেনসিলভানিয়ায় তার সঙ্গে জো বাইডেনের ভোটের ব্যবধান কমে আসতে থাকে।
এর আগে নির্বাচনের ফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি রাজ্য জর্জিয়ায় ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে ৯১৭ ভোটে এগিয়ে গেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি পুনঃনির্বাচিত হতে চান, পেনসিলভানিয়া এবং জর্জিয়া- দুটিতেই জয়লাভ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন দুটি রাজ্যেই জো বাইডেন এগিয়ে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জয়লাভের পথ একেবারেই আটকে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের চৌধুরী মালঞ্চ এলাকায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের নির্যাতন বেড়ে চলেছে। এক সপ্তায় ওই গ্যাংয়ের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চার কিশোর। তারা হচ্ছেন- নন্দবালা গ্রামের গৃহবধূ খোদেজা বেওয়া(৪৮), স্কুল ছাত্র মো. নিত্যয়(১৭), রায়হান(১৬), দক্ষিণ চৌধুরী মালঞ্চ গ্রামের আজিজুল(১৮) ও বাহির শিমুল গ্রামের মঞ্জুরুল আলম(২০)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মগড়া ইউনিয়নের চৌধুরী মালঞ্চ গ্রামের অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় শাহজাহান মিয়ার ছেলে মাহফুজের (১৮) নেতৃত্বে ওই এলাকায় গড়ে ওঠেছে একটি কিশোর গ্যাং।
ওই গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদের মধ্যে একই গ্রামের মো. ছানোয়ার হোসেনের ছেলে জুবায়ের(১৮), মজিবর রহমানের ছেলে ইমন(১৯), আবু তালেবের ছেলে আলী হোসেন(১৮) ও মো. তুলা মিয়ার ছেলে জাহিদুর রহমান(১৮) অন্যতম। তারা দলবেঁধে মাদকদ্রব্য গ্রহন করে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। ছাত্রদের র্যাগিং করা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে কেউ বাঁধা দিতে গেলে মারপিট করা তাদের নিত্যদিনের কাজ। তাদের বেপরোয়া চলাফেরার কারণে স্কুলের শিক্ষকরা সম্মানের ভয়ে কিছু বলতে পারেন না।
সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, ওই কিশোর গ্যাংয়ের সর্বশেষ শিকার নন্দবালা গ্রামের সরকারি চাকুরিজীবী রফিকুল ইসলামের ছেলে অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. নিত্যয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি রাস্তায় যাত্রী নামানো নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক রায়হানের সাথে কিশোর গ্যাংয়ের নেতা মাহফুজের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রায়হানকে পিটিয়ে আহত করে।
এ ঘটনায় বাঁধা দেওয়ার জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে মো. নিত্যয়কেও পিটিয়ে আহত করে। এ সময় স্থানীয় মৃত মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী খোদেজা বেওয়াকেও মারপিট করা হয়।
এর আগে এক স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদের জের ধরে গত মঙ্গলবার দক্ষিণ চৌধুরী মালঞ্চ গ্রামের মোতালেবের ছেলে মো. আজিজুলকে মারপিট করে। প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য সেবনের প্রতিবাদ করায় গত ৩১ অক্টোবর বাহির শিমুল গ্রামের মঞ্জুরুল আলমকে পিটিয়ে আহত করে।
স্থানীয় মাতব্বর জুয়েল রানা, মো. ইব্রাহিম মিয়া, মো. নাছির উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান সহ অনেকেই জানান- মালঞ্চ, দক্ষিণ চৌধুরী মালঞ্চ, মীরপুর, নন্দবালা, ঘোষের গাগরাজান, বাহির শিমুল, ভিতর শিমুল গ্রামগুলোর লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র সরকারি রাস্তাটি চৌধুরী মালঞ্চ গ্রাম দিয়ে জেলা শহরের মূল রাস্তায় মিশেছে। এতদাঞ্চলের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টিও চৌধুরী মালঞ্চ গ্রামে অবস্থিত। ফলে চৌধুরী মালঞ্চ গ্রামে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের নানা অত্যাচার-নির্যাতন অনেকেই মুখবুঝে সহ্য করতে বাধ্য হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মজনু মিয়া জানান, কোন ঘটনা-দুর্ঘটনার বিষয়ে কেউ বিচার প্রার্থনা না করলে তাদের তেমন কিছু করার থাকে না। কেউ অভিযোগ করলে তারা ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় মাতব্বরদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, স্কুলছাত্র মো. নিত্যয়কে মারপিটের ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলে গীতা রাণী সাহা নামে এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বাঘিল ইউপির পিচুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গীতা রানী সাহা ওই গ্রামের নারায়ণ সাহার স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, গীতা রাণী সাহার সঙ্গে তার ছেলে প্রদীপ সাহার সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। তাই ছেলে ও মা পৃথকভাবে বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার গীতা রাণী সাহা তার ছেলে প্রদীপের বাসায় যান। দুপুরে প্রদীপ তার মাকে গোসল করিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরে গীতা রাণী সাহার মৃত্যু হয়।
প্রদীপের ফুপু কমলা রাণীর অভিযোগ, সম্পত্তির জন্য তার মাকে প্রতীপ হত্যা করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রদীপের বিচার দাবি করেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান, তাদের সম্পত্তির বিষয়ে একাধিকবার সালিশ-বৈঠক করেও কোনো সমাধান হয়নি।
বাঘিল ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই ইউপি সদস্য পাঠিয়েছেন তিনি।
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাননি।
নদী-চর, খাল, বিল গজারির বন, টাঙ্গাইলের শাড়ি তার গর্বের ধন। বাংলার ঐতিহ্য আর ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলা টাঙ্গাইল। প্রাচীনকাল থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে এ জেলা। মোগল আমলে দেশ-বিদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসতো এখানে। ব্যবসার কাজে নৌকায় করে খাল দিয়ে টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে টাঙ্গাইলে খালগুলো অস্তিত্ব হারাচ্ছে।
কাগজপত্র অনুযায়ী টাঙ্গাইল শহরের মোট খাল ২৭টি। এর মধ্যে তিনটি খালের অস্তিত্ব নেই। বাকি ২৪ খাল প্রভাবশালীরা নানা কৌশলে দখল করছে। খাল দখল করে নির্মাণ করেছে বড় বড় মার্কেট এবং বাসাবাড়ি।
কাগজ কলমে দাগ নং, খতিয়ান, এসএ নং ওসিএস নং থাকলেও বাস্তবে তা দেখা খুব কষ্টকর। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এতে করে একটু বৃষ্টি হলেই শহরের বেশির ভাগ এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এসব খাল থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই এসব খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহের দাবি জানিয়েছেন শহরবাসী। টাঙ্গাইল জেলায় কতগুলো খাল রয়েছে তার কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইলের জরিপ অনুযায়ী, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে ২৭ খাল রয়েছে। তার মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডের দেওলা ধুল মৌজায় ২৪২ ও ৪৯৯ দাগের দেওলা হতে কান্দিলা পর্যন্ত একটি খাল, ২ নং ওয়ার্ডের এনায়েতপুর মৌজায় ১৮৬০ দাগের মাগুরাটা হতে বৈল্লা হাটখোলা হয়ে হাজেরা ঘাট পর্যন্ত একটি খাল, ৩ নং ওয়ার্ডের কাগমারা, পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া মৌজার ৩২২৬, ১০৯৩, ৯০০ দাগের ও ৫৭ সিএস’র লৌহজং নদী হতে বেড়াডোমা পর্যন্ত একটি খাল, বেলকুচি রোড হতে জালাল পন্ডিতের বাড়ি পর্যন্ত একটি খাল, ৪ নং ওয়ার্ডের বেড়াডোমা, দিঘুলিয়া, পাড়দিঘুলিয়া মৌজার ২০৮, ৩৪১, ৮ সিএস এর লৌহজং নদী হতে সাটিয়া পর্যন্ত একটি খাল, বেড়াডোমা নদী হতে কাগমারা পর্যন্ত একটি খাল, দিঘুলিয়া ব্রিজের ঢাল হতে সারুটিয়া পর্যন্ত একটি খাল, ৫ নং ওয়ার্ডের সাকরাইল, কালিপুর মৌজার ১৮০ আরওআর এর লৌহজং নদী হতে সাকরাইল পর্যন্ত একটি খাল, সিএস ১৩৩৪ ও হাল ১৩২৯ এর সাকরাইল নদী হতে সন্তোষ পর্যন্ত একটি খাল, ৫০০ বিএসের সানা মিয়ার বাড়ি হইতে বকুলতলী রোড পর্যন্ত একটি খাল, ৫৩৫, ৫৩৮ ও ৯০৭ বিএসের বটতলা হতে সেন বাড়ি পর্যন্ত একটি খাল, ৪২৫ বিএসের মতিন চাকলাদারের বাড়ি হতে বেলতা ভাঙ্গাবাড়ী পর্যন্ত একটি খাল, ৬ নং ওয়ার্ডের পারদিঘুলিয়া মৌজার ৮৪, ১৪৬, ১০২, ৩৭৭, ৪০২, ৪১৯, ৬৮৮ দাগের লৌহজং নদী হতে বাকায়িার ব্রিজ পর্যন্ত একটি খাল, ৭ নং ওয়ার্ডের সন্তোষ, ভবানীপুর, পাতুলী পাড়া মৌজার ৫৪, ২৭, ৭১৯ সিএসের লৌহজং নদী হতে সন্তোষ লালব্রিজ পর্যন্ত একটি খাল, ৬০৭ সিএসের লক্ষ্মীপুর হতে সন্তোষ দিঘি পর্যন্ত একটি খাল, ৭৪৭ সিএসের সন্তোষ লালব্রিজ হতে বাগানবাড়ী পর্যন্ত একটি খাল, ৮ নং ওয়ার্ডের সন্তোষ, অলোয়া ভবানী মৌজার ৮০৬, ১০১২ সিএসের সন্তোষ লালব্রিজ হতে সন্তোষ মাদারখোলা পর্যন্ত একটি খাল, ৩, ১৪৬, ১৫৬, ১৫৭, ১৫৮, ১৮৯, ২৬৭ সিএসের সন্তোষ মাদারখোলা হতে এলাসিন রোড জোড়াব্রিজ পর্যন্ত একটি খাল, ৯ নং ওয়ার্ডের অলোয়া ভবানী ও অলোয়া তারিনী মৌজার ৭৯৮, ৮৪৯, ৯২৭ এসএ’র লৌহজং হতে এলাসিন রোডের জোড়াব্রিজ পর্যন্ত একটি খাল, ১১ নং ওয়ার্ডের কান্দাপাড়া, কচুয়াডাঙ্গা, বেড়বুচনা মৌজার ৩২৮ সিএসের বেড়াবুচনা পানির ট্যাংক হতে লৌহজং পর্যন্ত একটি খাল, ২৩৩ সিএসের দক্ষিণ বেড়াবুচনা মেইন রোড হতে অলোয়া পাইকোস্তা পর্যন্ত একটি খাল, ১৪ নং ওয়ার্ডের বিশ্বাস বেতকা মৌজার ৫৯৭, ৫৯৮, ৬০১, ৬২০ এসএ’র বাকামিয়ার ব্রিজ হতে খাদ্যগুদামের পাশ্ববর্তী ব্রিজ পর্যন্ত একটি খাল, ১৫ নং ওয়ার্ডের বিশ্বাস বেতকা মৌজার ৭১৭,৭১৯, ৪২৭, ৭৩১, ৭৩৪, ৭৩৫, ৭৭৩, ৩৯০, ৭৮৩, ৮০১, ৮০৩ এসএ’র খাদ্যগুদাম হতে বেতকা সুতার পাড়া পর্যন্ত একটি খাল, ১৭ নং ওয়ার্ডের বিশ্বাস বেতকার মৌজার ৮১৫, ৮২০, ৮৩৮, ৮৬১, ৮৬৩ এসএ’র সুতার পাড়া হতে বোরাই বিল পর্যন্ত একটি খাল, ৩০০, ২৩৬ এসএ’র মুন্সিপাড়া মসজিদ হতে প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত একটি খাল, ১৮ নং ওয়ার্ডের সাবালিয়া, কোদালিয়া মৌজার ২৯০, ২৪৬ সিএসের সাবালিয়া বটতলা হতে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত একটি খাল, ৬০, ১২১, ১১৭ এসএ’র সদর হাসপাতাল হতে কোদালিয়া শেষ সীমানা পর্যন্ত একটি খাল। এছাড়া ১০, ১২, ১৩ ও ১৬ নং ওয়ার্ডে কোন খাল নেই।
টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাগমারা, পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া মৌজায় ৩২২৬, ১০৯৩, ৯০০ দাগের ও ৫৭ সিএস’র লৌহজং নদীর বেলকুচি রোড হতে জালাল পণ্ডিতের বাড়ি পর্যন্ত একটি খাল, ১১ নং ওয়ার্ডের কান্দাপাড়া, কচুয়াডাঙ্গা, বেড়বুচনা মৌজার ৩২৮ সিএসের বেড়াবুচনা পানির ট্যাংক হতে লৌহজং পর্যন্ত একটি, ২৩৩ সিএসের দক্ষিণ বেড়াবুচনা মেইন রোড হতে অলোয়া পাইকোস্তা পর্যন্ত ও ১৮ নং ওয়ার্ডের সাবালিয়া, কোদালিয়া মৌজার ২৯০, ২৪৬ সিএসের সাবালিয়া বটতলা হতে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত, ৬০, ১২১, ১১৭ এসএ’র সদর হাসপাতাল হতে কোদালিয়া খালসহ মোট তিনটি খালের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এদিকে সাবালিয়া খালটি টাঙ্গাইল শহরের ময়মনসিংহ সড়কের বায়তুন নূর জামে মসজিদের পাশ থেকে সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া হয়ে সাবালিয়া বটতলা কালবার্ট হয়ে বৈরান নদীতে সংযোগ হয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে একটি প্রভাবশালী মহল প্রথমে ময়লা আর্বজনা দিয়ে খালটি কৌশলে ভরাট করে তারপর প্রথমে টিন দিয়ে সীমানা প্রাচীর গড়ে তুলে। কিছুদিন যাওয়ার পর সেখানে ইট দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। আর কয়েক বছর যাওয়ার পর সেই সীমানা প্রাচীর ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এভাবেই বহুতল ভবন নির্মাণ করে সাবালিয়া খালের চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিন জমিন গিয়ে দেখা যায়, খালের ওপর সীমানা প্রাচীর, আধা-পাকা ঘর, টিনশেড ঘর ও বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। খালের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা ও দুগন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। এ দিকে সরকারি কুমুদিনী কলেজ গেট-সুরুজ সড়কের সাবালিয়া বটতলা এলাকায় খালের ওপর কালভার্ট থাকলেও দক্ষিণ পাশে খাল চেনার কোনো উপায় নেই। যে যার মতো পেরেছে খালের জায়গা দখল করেছে। কালবার্টের দক্ষিণ পাশে রফিকুল ইসলাম নামে একজন সীমানা প্রাচীর ও বহুলতল ভবন নির্মাণ করায় খালের কোনো চিহ্ন নেই। শুধু তিনিই নন। তার মতো সাইদুর রহমান, ইদু মিয়া, মো. হারুন মিয়া ও জাহাঙ্গীর মিয়াও খালের জায়গা দখল করে সীমানী প্রাচীরসহ বহুতল ভবণ নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়াও খালের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন টাঙ্গাইল পৌরসভা। রাস্তার পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেলকুচি রোড হতে জালাল পণ্ডিতের বাড়ি পর্যন্ত খাল, মুন্সিপাড়া মসজিদ হতে প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত খাল, সাবালিয়া বটতলা হতে সদর হাসপাতাল হয়ে কোদালিয়া খালের অস্তিত্ব নেই।
পৌরসভার কচুয়াডাঙ্গা এলাকার রহিম মিয়া বলেন, কচুয়া ডাঙ্গা বেড়াবুচা খাল দিয়ে প্রায় ৪০ বছর আগে ধান-পাটের নৌকা নিয়ে আমরা করটিয়া হাটে যাইতাম। সেই খাল ভরাট হওয়ার কারণে আজ খালের কোনো চিহ্ন নেই। প্রবাবশালীরা যে যার যার মতো খালের জায়গা দখল করে বাসাবাড়ি করেছে। অন্যদিকে খালের জায়গা দিয়ে পৌরসভা রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করেছে। লৌহজং নদীর মতো শহরের খালগুলো উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি জেলা প্রশাসকের কাছে।
বেড়াবুচনা এলাকার হাসেম মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার খালটি দিন দিন তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। প্রভাবশালীরা খালটি দখল করেছে। একমাত্র প্রশাসনই পারবে খালটি উদ্ধার করতে। তারা ছাড়া অন্যকেউ খালটি উদ্ধার করতে পারবে না।
পারদিঘুলীয়া এলাকার আজগর আলী বলেন, কয়েক যুগ আগে নৌকা যোগে লৌহজং নদী হয়ে শ্যামা খাল দিয়ে শহরের নিরালা মোড়ে ব্যবসায়ীরা আসতো। সেই খালটি এখন ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও পচা পানির দুর্গন্ধে খালের পাশ দিয়ে হাঁটা চলা করা যায় না।
বিশ্বাস বেতকা এলাকার নাজমুল মিয়া বলেন, নামে মাত্র খাল থাকলে নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় একটু বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও পচা পানির দুর্গন্ধে বাসায় থাকতে খুব কষ্ট হয়।
টাঙ্গাইল নদী, খাল, বিল, জলাশয় ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক রতন সিদ্দিকী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসে অনেক আগে থেকে খালের জায়গা ভরাট করে দখল হয়ে আসছে। যে কারণে বর্তমান সময়ে কাগজ কলমে খাল থাকলেও বাস্তবে দেখা খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইলের ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, শহরের ২৭টি খালের বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। নদী, খাল, বিল ও জলাশয় উদ্ধারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও হাইকোর্টের দিকনির্দেশনা রয়েছে।
খালের ওপর রাস্তা নির্মাণ করা নিয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর সাজ্জাদ আহম্মেদ সবুজ বলেন, পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন সঠিক জায়গাতেই করা হয়েছে। কোনো খালের ওপর বা খালের জায়গা দখল করে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন, লোভে পড়ে মানুষ খাল দখল করে। খাল উদ্ধারের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে খাল উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানের লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে শহরের খাল গুলো খনন করা হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, খালের খোঁজ খবর নিয়ে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও দৃষ্টিনন্দন দুটি গয়না নৌকা ভাসানো হয়েছে জাতীয় সংসদ লেকে। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ লেকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তৈরি করা নৌকা দুটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
নৌকা ভাসানো কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আপাদমস্তকে একজন বাঙালি। তিনি বাঙালি জাতিস্বত্তা এবং সংস্কৃতিকে লালন করতেন এবং বাঙালির সংস্কৃতির মুক্তি এবং তা বিশ্বদরবারে তুলতে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই তার দলীয় প্রতীকও নৌকা। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা এবং এদেশের সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে, প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এজন্য যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।’.
বেমামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে রয়েছে সমৃদ্ধশালী ইতিহাস, ঐতিহ্য। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা এদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি মৌলিক উপাদান। ঐতিহ্যবাহী নৌকাগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত নৌকা-বাইচ, নৌকা-মেলা এবং নৌকা জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নদীমাতৃক বাংলাদেশ নৌ-পর্যটন উন্নয়ন এবং আবহমান বাংলার নৌকাগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এগুলো দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে।’
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘নৌকা এবং নদীর সঙ্গে রয়েছে আমাদের সভ্যতা সৃষ্টির আত্মিক সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে নৌ-পর্যটন উন্নয়নে বাপক এর উদ্যোগে ট্যুরিস্ট ভেসেল সংগ্রহের কাজ চলছে। এছাড়া নৌকা এবং নদীকেন্দ্রীক সভ্যতাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে দরার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ’
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, ‘আবহমান বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো সংরক্ষণ এবং যথাযথ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।.
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. জিয়াউল হক হাওলাদার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং শামসুল হক চৌধুরী, বেসামিরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ রুবিনা আক্তার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন এ নৌকা দুটি তৈরিতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। নৌকা দুটি ২৭ ফুট লম্বা এবং পাঁচ ফুট চওড়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নৌকা দুটি তৈরি করা হয়। এর ডিজাইনও তিনি করেছেন। পরে প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান চূড়ান্ত ডিজাইনটি করেছেন। তৈরির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এটি দেখে সম্মতি দিয়েছেন।
আরও জানা গেছে, মুজিববর্ষ চলাকালীন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নৌকা দুটি পরিচালিত হবে। পরবর্তীতে সংসদ সচিবালয় ও পর্যটন করপোরেশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
সংসদ ভবনের লেকে ভাসমান নৌকায় সাধারণ মানুষের ওঠার সুযোগ থাকছে না। ভিআইপি ও বিদেশি পর্যটকরা এ নৌকায় সংসদের লেক ভ্রমণ করতে পারবেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কৃষ্টি-কালচার ও ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে এই নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নবী (সাঃ)এর ব্যঙ্গাত্মক ও কটুক্তিমূলক কার্টুন প্রদর্শন এবং অবমাননার প্রতিবাদে ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসীর সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা।
শুক্রবার (৬ নভেম্বর) বিকালে উপজেলার গোবিন্দাসী বাজারে ফ্রান্স বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে এ মিছিল হয়। এসময় তারা ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
মিছিল শেষে ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের টি-রোডে বিক্ষোভ করেন তারা।
বিক্ষোভে বক্তারা দেশবাসীকে ফ্রান্সের সকল পণ্য বয়কটের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ও কটুক্তিমূলক কার্টুন প্রদর্শন করায় ইসলাম ধর্মকে ব্যাপকভাবে হেয় ও অবমাননা করা হয়েছে। কটুক্তিকারীরা সবাই নাস্তিক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে।’
বিক্ষোভে বক্তব্য দেন- উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন চকদার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিন, গোবিন্দাসী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ইমাম শহিদুল ইসলাম, মুফতি মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও বিক্ষোভ সমাবেশে সর্বস্তরের মুসুল্লিরা অংশ নেন।